বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান বলেছেন, বিশ্বের কোথাও সত্যিকার অর্থে কোন মুসলমান ঈদ উদযাপন করতে পারে না। কারন কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাতে রাসূল এসেছিল, শান্তির লালিমায় উজ্জীবিত করার জন্য। কিন্তু এর সাথে যে সম্পর্ক থাকার কথা ছিল, তা নাই বলেই আমাদের কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। আসুন আমরা আল্লাহর কাছেই আত্মসমর্পণ করি, তাহলে গোটা দুনিয়ার মানুষ আপনার কাছে আত্মসমর্পণ করবে। এটা করতে না পারলে, পদে পদে কঠিন পরীক্ষা, ক্ষেত্র বিশেষে লাঞ্চনার মুখোমুখি হতে হবে।
গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত ঈদ পুনর্মিলনী ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় ঈদ পুনর্মিলনীতে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান ও মাওলানা আব্দুল হালিম, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি সালাহউদ্দিন আইউবী। আরও বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য এডভোকেট জসীম উদ্দিন সরকার, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর মঞ্জুরুল ইসলাম ভুঁইয়া, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, দেলাওয়ার হোসেন, মু. আবদুল জব্বার, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ডাঃ আবু আফনান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিশে শুরা সদস্য এডভোকেট জসীম উদ্দিন তালুকদার। শহীদ ও নির্যাতিত মজলুম পরিবারের সন্তানদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাবেক আমীরে জামায়াত অধ্যাপক গোলাম আযম (রহিঃ) এর সন্তান মামুন আল আযমি, শহীদ আমীরে জামায়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর সন্তান ব্যারিস্টার নাজীব মোমেন, সেক্রেটারি জেনারেল শহীদ আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের সন্তান আলী আহমাদ মাবরুর, শহীদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের সন্তান হাসান ইমাম ওয়াফি, শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লার সন্তান হাসান জামিল, কারারুদ্ধ নায়েবে আমীর মজলুম জননেতা আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সন্তান মাসুদ সাঈদী। অনুষ্ঠানে শহীদ পরিবারের সদস্যদের বক্তব্যের সময় এক আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সাইমুম শিল্পী গোষ্ঠী এবং মহানগর শিল্পী গোষ্ঠী ও নাট্যদলের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা সবাইকে আবেগ আপ্লুত ও উজ্জীবিত করে।
ডা. শফিকুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, বিশ্বের কোথাও সত্যিকার অর্থে কোন মুসলমান ঈদ উদযাপন করতে পারে না। কারন কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাতে রাসূল এসেছিল, কালিমা মুক্ত করে শান্তির লালিমায় উজ্জীবিত করার জন্য। কিন্তু এর সাথে যে সম্পর্ক থাকার কথা ছিল, তা নাই বলেই আমাদের কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তাই আমাদের সেই কুরআনের দিকেই ফিরে আসতে হবে। তিনি বলেন, মাত্র এক সপ্তাহ আগেই মাহে রমযান অতিক্রম করে এসেছি। আসুন আমরা আল্লাহর কাছেই আত্মসমর্পণ করি, তাহলে গোটা দুনিয়ার মানুষ আপনার কাছে আত্মসমর্পণ করবে। এটা করতে না পারলে, পদে পদে কঠিন পরীক্ষা, ক্ষেত্র বিশেষে লাঞ্চনার মুখোমুখি হতে হবে।
জামায়াত আমীর ফিলিস্তিনের পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, সেখানে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা হয়েছে। কিন্তু এর আগেও যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা হয়েছিল। তারপরও সেই জনপদ রক্তাক্ত হয়েছে। তাই এই যুদ্ধ বিরতি ঘোষনায় আনন্দ খুঁজে পাই না। আনন্দিত তো আমরা সেই দিন হবো, যে দিন ফিলিস্তিনের গাজাসহ পৃথিবীর যেখানে মানুষের, বিশেষভাবে মুসলমানদের উপর, নির্বিশেষে মানবতার উপর জুলুম, অত্যাচার চলছে; তার অবসান হবে। যে দিন আমার দেশে মসজিদের মিম্বার থেকে সিদ্ধান্ত যাবে, মুসল্লিরা সেই সিদ্ধান্ত মানবে, যে দিন আল্লাহর কুরআন অনুযায়ী দেশে ফায়সালা হবে, সেই দিনই গোটা দেশবাসী প্রকৃত ঈদ উদযাপন করবে। তিনি উল্লেখ করেন, সে দিন কারো উপর কোন জুলুম হবে না, কোন অত্যাচার হবে না। আমি সেই আশার আলোই দেখছি।
ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ইসলামের দাওয়াত মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। রাজধানীর প্রতিটি পাড়ায় মহল্লায় কালেমার আওয়াজ পৌছে দিতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, রমযানে শুধু উপবাস করলেই তাকওয়া অর্জন হয় না। নবী (সা:) যেভাবে রোজা রাখতে বলেছেন, সেভাবে রাখার মাধ্যমে রমযানের প্রকৃত অর্জন পাওয়া সম্ভব। তিনি বলেন, রোজা আমাদের পাপ থেকে বাঁচার শিক্ষা দিয়েছে। তাই তাকওয়াভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রোযার শিক্ষা বাস্তবায়ন করতে হবে।
মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, মুত্তাকি হওয়ার জন্যই রোযা ফরজ করা হয়েছে। রোজাদারদেরই আনন্দ হচ্ছে ঈদ। ঈদের দিন সারা বিশ্বের মানুষ যেমন ঐক্যবদ্ধ হয়, তেমনি সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, এক মাস সিয়াম সাধনার পর, তা থেকে আমরা কী অর্জন করতে পেরেছি, আমাদের সেটা মূল্যায়ন করতে হবে। সেই শিক্ষাকে আমাদের বাস্তব জীবনে প্রতিফলন করতে হবে। সেই শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে দ্বীনকে বিজয়ী আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। তিনি শহীদ নেতৃবৃন্দের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।